পবিত্র কোরআনে কালিমায়ে তায়্যিবাহ
১নং আয়াত: কালিমায়ে তায়ি্যবাহ )كَلِمَةً طَيِّبَةً( শব্দটি সূরা ইবরাহিমের ২৪ নং আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে। ইমাম বুরহানুদ্দীন কিরমানী (ওফাত, ৫০৫ হি.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-قوله، ( كَلِمَةً طَيِّبَةً ) ، عند جل المفسرين، لا إله إلا الله محمد رول الله -"মহান আল্লাহর বাণী (কালামায়ে তায়্যিবাহ বা পবিত্র বাক্য) এর ব্যাখ্যায় উঁচু পর্যায়ের মুফাসসিরিনগণ বলেন, তা পরিপূর্ণ রূপ হল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।"'ইমাম সুয়ূতি, ইমাম তবারী, ইমাম ছালাভী, আল্লামা ইবনে কাসির () সহ আরও অনেকে সংকলন করেন- عَن عَطَاءِ الْخُرَاسَانِي رَضِي الله عَنهُ { وألزمهم كلمة التَّقْوَى} قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّد رَسُول الله-"তাবেয়ী ইমাম আতা খুরাসানী (এ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি খোদাভিরুদের বাণী তাদের উপর আবশ্যক করেছেন, তিনি বলেন, এর অর্থ হচ্ছে (খোদাভিরুদের বাণী মানে) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।”২ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হাতেম (এ) হযরত আবু হুরায়রা (২) এর অভিমত সংকলন করেন- وَهِيَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّد رَسُولِ اللَّهِ-"এটাই হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।"" আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী এর ব্যাখ্যায় লিখেন وَهِيَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ-"আর এটাই হল, পবিত্র বাক্য 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্'।" ইমাম বায়হাকী এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-وَهِيَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ-"আর এটাই হল, পবিত্র বাক্য 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্'।"আয়াত নং. ২.:মহান রব তাঁর হাবিবের নামকে তাঁর সাথে সাথে রেখেছেন। তাই যেখানে আল্লাহর যিক্র বা স্মরণ হয় সেখানে আমার নবীজীর যিকরও হয়। এজন্যই মহান রব বলেন-{وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ)।-"আমি আপনার যিকির কে বুলন্দ করে দিয়েছি।" (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত নং-০৪) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী আন্দুলুসী তিনি উল্লেখ করেন- আলায়হি أي: لا أذكر إلا ذكرت معي. وذلك قول المؤمنين: لا إله إلا الله، محمد رسول الله।-"অর্থাৎ যেখানে আমার যিকির হবে আমার সাথে আপনার যিকিরও হবে। আর এজন্যই মু'মিনগণ বলেন, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্'।"৬ আয়াত নং, ০৩: সূরা ফাতাহ ২৬ নং আয়াতের )كَلِمَةَ التَّقْوَى( অর্থাৎ খোদাভিরুদের বাণী এর ব্যাখ্যায় সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (২) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّد رَسُول الله-"আর সেটি হল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্'।"' ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি এমনটি উল্লেখ করেছেন। (ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে জালালাইন, ১/৬৮৩ পৃ.) এমনকি আহলে হাদিসদের শ্রদ্ধীয় ইমাম ইবনে কাসির তার তাফসিরে লিখেন-وَهِيَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ-"আর সেটিই হল 'লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ'।"" আয়াত নং. ৪:কালিমার প্রথম অংশটি 'সূরা সাফফাত' এর ৩৫ নং আয়াত এবং দ্বিতীয় অংশটি 'সূরা ফাতহ' এর ২৯ টি নং আয়াতে বিদ্যমান রয়েছে। দেখুন- إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ (سورة الصافات) -" এমন (বিদ্রোহী) ছিলো, যখন এদের বলা হতো, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই, তখন তারা অহংকারে ফেটে পড়তো।" (সূরা সাফফাত, ৩৫) জগত বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম কুরতবী () এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন- وَهِيَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ -"(যে বাক্য শুনে কাফেরেরা অহংকারে ফেটে পড়তো) এটির পরিপূর্ণ বাক্য হল 'লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ'।"" মহান আল্লাহ তা'য়ালা কালিমার দ্বিতীয় অংশ উল্লেখ করেন- مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ (سورة الفتح)-“হযরত মুহাম্মদ () আল্লাহর রাসূল; অন্য যেসব লোক তাঁর সাথে আছে তারা (নীতির প্রশ্নে) কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, (আবার তাঁরা) নিজেদের মধ্যে একান্ত সাহানুভূতিশীল।" (সূরা ফাতাহ, আয়াত নং-২৯) পবিত্র কুরআনে যদিও আলাদা করে কালেমাটি রয়েছে; কিন্তু রাসূল (স) এবং তার সাহবীরা, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীরা এটিকে এক সাথে করে ব্যাখ্যা করে খুলাছা করে দিয়েছেন।